👉 বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্বন্ধে প্রবন্ধ রচনা
রচনাসংকেত : ১) ভূমিকা; ২) তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণ; ৩) গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে সতর্কতা; ৪) উয়ায়নের প্রভাব; ৫) উপসংহার।
🎯 বিশ্ব উষ্ণায়ন:
প্রকৃতি আপন খেয়ালে চলে। প্রকৃতির বুকে কোনোরকম হস্তক্ষেপ প্রকৃতি মেনে নেয় না। প্রকৃতির ভারসাম্য প্রকৃতি নিজেই রক্ষা করে। প্রকৃতির বুকে মানুষ গড়ে তুলেছে সমাজ। ঘটেছে সভ্যতার অগ্রগতি। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উন্নত মানবসভ্যতা। দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানের বিজয়রথ। মর্ত্যভূমি থেকে রথ চলেছে মহাকাশের বুকে। চাঁদের সীমানা পেরিয়ে মঙ্গলের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে। মহাশূন্যের বুকে উপগ্রহ পাঠিয়ে স্পেস স্টেশন তৈরি হয়েছে। মানুষ সেখানে গিয়েও নতুন নতুন তথ্য জানতে চালাচ্ছে অনুসন্ধান।কিন্তু সভ্যতার বিবর্তনে পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটছে, যার জন্য বিজ্ঞানীরা চিন্তিত।
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রাণীজগতের কাছে এক গভীর সতর্কবার্তা।
🎯 তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণ:
মানবসভ্যতার অগ্রগতির মূলে বিজ্ঞানের অবদান। আবার এই বিজ্ঞানের পরোক্ষ প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তন। সভ্যতার অগ্রগতির চিহ্ন লক্ষ লক্ষ কলকারখানা। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে
কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি নানান গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে সঞ্জিত হচ্ছে এই গ্যাস। এগুলি গ্রিন হাউস গ্যাস। এরই ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পৃথিবীকে তপ্ত করে তুলছে। বিশেষত বিজ্ঞানীদের সমীক্ষায় বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণের বৃদ্ধির হার ১৫%, যা আগামী ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে হবে 550ppmv। পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে যা ছিল ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৬ ডিগ্রি সে.।
পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা । জনবৃদ্ধির ফলে তৈরি হয়েছে বাসযোগ্য ভূমি, গড়ে উঠেছে নগর। নতুন নতুন জনপদ তৈরি করতে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আর-একটি কারণ নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা। জনসংখ্যাবৃদ্ধির ফলে তৈরি অন্যতম নির্ভরযোগ্য বনাঞ্চল ধ্বংস করেছে। পৃথিবীর মোট ভূভাগের পঞ্চাশ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে পঁয়ত্রিশ শতাংশে। ফলে জ্বালানি থেকে, কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে বর্ধিত হয়েছে।
🎯 বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে সতর্কতা:
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন হয়েছিল। সেই সম্মেলনে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ( global warming)সম্পর্কে সতর্ক করে সারা পৃথিবীর বুকে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে সংঘটিত হয় ‘বসুন্ধরা বৈঠক’। এই বৈঠকে একটি সত্য স্বীকৃত হয় যে, আধুনিক সভ্যতার প্রগতির পদক্ষেপেই সূচিত হচ্ছে দূষণের উৎস। পৃথিবীকে রক্ষা করা, বাসভূমিকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলির দিকে আঙুল তুলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছিল। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে কিয়োটা চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির উৎপাদন কমানোর কথা বলা হয়েছিল এবং বহু দেশ তা মানতে রাজিও হয়েছিল।
🎯 বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effect of Global warming):
নির্মমভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার অর্থ মনুষ্যদেহে, জীবদেহে, উদ্ভিদজগতে ও জড়জগতে বিপত্তি টেনে আনা। তাই বিজ্ঞানীরা জানালেন মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও এর প্রভাব পড়বে। বায়ুর গতিপথ পরিবর্তিত হবে। বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল খরাপ্রবণ হবে। ঠিক ঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হবে না। উদ্ভিদ ও ভয়ায়নের প্রভাব প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে বলেছেন, ওজোনস্তরে ছিদ্র দেখা গিয়েছে। ওজোনস্তর সূর্য অথকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। ওজোনস্তরে ছিদ্র হওয়ার অর্থ পৃথিবীর ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করা। যার প্রভাবে মানুষ হারাবে দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাবে এবং মানুষ আক্রান্ত হবে ক্যানসারে।
🎯 উপসংহার:
মানবসভ্যতা ক্রমোন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি মানুষকে গতিময় করেছে। এর হাত ধরেই মানুষ লক্ষ্যে পৌঁছাবে। কিন্তু সভ্যতা যেন প্রকৃতির ওপর খবরদারি না করে, পৃথিবীকে মলিন না করে তোলে ।কেন-না পৃথিবীতে মানুষই থাকবে, মানুষই শেষ সত্য। সেই সত্যের কোনো অপলাপ যেন না হয়। সভ্যতা মানুষ গড়েছে কিন্তু পূর্ণ সচেতনতার অভাবে আত্মদন্তী ক্ষমতার পোষণে মানুষ যেন মানুষের অপমান না করে, সভ্যতার ক্রমসংকটকে আরও সংকটতর পর্যায়ে না নিয়ে যায়। বিজ্ঞানের হাত ধরে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব মানুষের, পথপ্রদর্শক এখানে বিজ্ঞানীরা।
Tags:
Paragraph